রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের এক চরম উদাহরণ হয়ে উঠেছে পল্লবী থানা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি বাপ্পির নাম। নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, মাদক সিন্ডিকেটে জড়িত থাকা, হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের অর্থায়ন এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে সখ্যতা—এসব গুরুতর অভিযোগ সত্ত্বেও এখনও কেন বহিষ্কার করা হচ্ছে না, এ নিয়ে ছাত্রদল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বিবাহিত এবং একাধিক সন্তানের পিতা হয়েও বাপ্পি ছাত্রদলের পদ আঁকড়ে ধরে আছেন। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও আদর্শের পরিপন্থী এমন আচরণে নেতাকর্মীরা হতবাক। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি একাধিক অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং পল্লবী থানা এলাকায় একটি মাদকচক্রের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। এমনকি ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার সাথে তার ঘনিষ্ঠতার ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা দলের ভাবমূর্তিতে বড় ধাক্কা দিয়েছে।
ছাত্রদলের সভাপতি ও স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের একাংশ স্পষ্ট ভাষায় প্রশ্ন তুলেছেন, “বাপ্পি কীভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন থাকলেন?” পশ্চিমাঞ্চল ছাত্রদল এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাকে বহিষ্কার না করে কেবল একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছে। এতে নেতৃবৃন্দের নিষ্ক্রিয়তা এবং স্বার্থন্বেষী রাজনীতির নগ্ন চিত্র ফুটে উঠেছে।
পল্লবী থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সবুজ খানকে রক্ষা করতে গিয়ে সম্প্রতি বাপ্পি মারধরের শিকার হন নিজ দলের কর্মীদের হাতে। তাকে কান ধরে ওঠবস করানো হয় এবং অনেক ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর থেকে ছাত্রদল, যুবদল এবং বিএনপির অভ্যন্তরে উত্তেজনা আরও বাড়ে।
বিভিন্ন নেতাকর্মী অভিযোগ করছেন, বাপ্পি তার পদ রক্ষায় ১০ লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে প্রস্তুত এবং প্রয়োজন হলে শীর্ষ নেতাদের আর্থিক প্রভাব বা ‘কু ফুঁস ফাঁক’ দিয়ে প্রভাবিত করছেন। কারণ পদ হারালে তার অবৈধ ব্যবসা এবং আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ নেতাদের সাথে গোপন আঁতাতের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে।
এমন এক জটিল প্রেক্ষাপটে ছাত্রদলের ভবিষ্যৎ ও আদর্শ হুমকির মুখে পড়েছে। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবিলম্বে বহিষ্কারের বিধান রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় নেতাকর্মীরা বিস্মিত ও হতাশ।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও পশ্চিমের ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির নেতারা একযোগে দাবি তুলেছেন: “ছাত্রদলের অস্তিত্ব রক্ষায় এবং রাজনীতিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বাপ্পিকে অবিলম্বে বহিষ্কার করতে হবে। এটি শুধু রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের প্রশ্ন নয়, এটি ছাত্রদলের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।”
অবশেষে বলা যায়, যদি বাপ্পির মতো বিতর্কিত ও দুর্নীতিপরায়ণ নেতাকে বহিষ্কার না করা হয়, তাহলে ছাত্রদলের মতো আদর্শিক সংগঠন এক ভয়াবহ আত্মধ্বংসের পথে এগিয়ে যাবে। এখনই সময়, ছাত্রদল তার শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার মানদণ্ড পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুক—না হলে ইতিহাস ক্ষমা করবে না।