চিকিৎসা খাতে চরম অব্যবস্থাপনার বলি হলো আরেকটি কোমল প্রাণ। কুড়িগ্রামের উলিপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসকদের গাফিলতি ও অবহেলায় মারা গেলো মাত্র ৫ বছরের শিশু সওদা। এই মর্মান্তিক ঘটনা চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে এলাকাবাসীর মাঝে।
ঘটনাটি ঘটে ৫ জুন বৃহস্পতিবার, বিকেল আনুমানিক ৩টার দিকে। উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেনী ইউনিয়নের ইন্দারপাড় এলাকার বাসিন্দা, সবিয়ালের মেয়ে সওদা, স্থানীয় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়।
শিশুটিকে দ্রুত উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে, পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী, কর্তব্যরত চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়েই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেন। দুর্ঘটনার তীব্রতায় গুরুতর আহত সওদা রংপুর নেওয়ার পথেই মৃত্যুবরণ করে।
ভুক্তভোগী শিশু সওদার পিতা সবিয়াল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমরা হাসপাতালে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তার ডেকেছিলাম, কিন্তু তারা শুধু একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলেন রংপুর নিয়ে যান। আমাদের মেয়ে তখনো শ্বাস নিচ্ছিল। যদি তখনই সামান্য চিকিৎসাও দেওয়া হতো, হয়তো আজ আমার সওদা বেঁচে থাকত।”
একাধিক স্থানীয়রা জানান, উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে বোঝাই যায় না এটি মানুষের চিকিৎসার কেন্দ্র। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নেই, জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের দেখা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার, ওষুধ-পথ্য সংকট তো নিত্যদিনের কথা। সওদার মৃত্যুর পর এমন দুরাবস্থার প্রতিবাদে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষ।
সওদার মরদেহ হাসপাতালের সামনে রেখে উত্তেজিত জনতা টানা চার ঘণ্টা অবস্থান করে। ‘হাসপাতাল সংস্কার চাই’, ‘অবহেলার দায়ে জবাবদিহিতা চাই’—এই স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্রিত হয়ে অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেন।
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা, থানা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। তারা এলাকাবাসীর ক্ষোভে একাত্মতা প্রকাশ করে অবিলম্বে হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা দূর করার আশ্বাস দেন। ইউএনও নয়ন কুমার সাহা, জনগণের অনুরোধে দাফনের জন্য মরদেহ হস্তান্তরের নির্দেশ দেন।
জনগণের দাবি
১. চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও জবাবদিহিতা,
২. হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা নিশ্চিত করা,
৩. জনবল সংকট নিরসনে অতিরিক্ত চিকিৎসক নিয়োগ,
৪. সকল চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত ওষুধ ও সরঞ্জাম সরবরাহ,
৫. সওদার মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ।
এই প্রতিবেদন শুধুমাত্র একটি শিশুর মৃত্যুর নয়, এটি দেশের গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থার চিত্রের প্রতিচ্ছবি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি অবহেলা বন্ধে পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে—আর মূল্য দিতে থাকবে সাধারণ মানুষ, কোমলমতি শিশুরা।