মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর বাণিজ্যনীতিতে একতরফা অবস্থান নিয়েছেন, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও শুল্কের চাপ ও কূটনৈতিক হুমকির মুখে পড়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ, বাণিজ্যিক হুমকি এবং একচেটিয়া নীতির কারণে বৈশ্বিক রাজনীতিতে নতুন এক মেরুকরণের আভাস মিলছে।
এই প্রেক্ষাপটে, মার্কিন চাপকে গুরুত্ব না দিয়ে রাশিয়া, চীন ও ভারত একসঙ্গে কৌশলগত অবস্থান নিতে চলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই তিন দেশের কাছাকাছি আসা বিশ্ব কূটনীতিতে নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পারে।
দীর্ঘ ছয় বছর পর চীন সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর এই সফরকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখার কারণেই এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে বলেন, সার্বভৌম দেশগুলোর স্বাধীনভাবে বাণিজ্যিক অংশীদার বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে। যদিও তিনি সরাসরি ভারতের নাম উল্লেখ করেননি, বিশ্লেষকদের মতে রাশিয়া ভারতের পাশে অবস্থান নিচ্ছে তা স্পষ্ট।
এই মুহূর্তে চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিতব্য সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে যাচ্ছেন মোদি। একই সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও চীন সফরে যাবেন। সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
মোদি সর্বশেষ চীন সফর করেছিলেন ২০১৯ সালে। এরপর ২০২০ সালে লাদাখে চীন-ভারত সীমান্তে সামরিক উত্তেজনার ফলে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। তবে বর্তমানে সেই সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে ফাটলের পরিপ্রেক্ষিতে।
সম্মেলনে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। ভারতের পক্ষ থেকে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সম্ভাবনাও রয়েছে, যার লক্ষ্য সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমিত করা এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করা।
২০২৪ সালের অক্টোবরে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে মোদি ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকের পর থেকেই সীমান্ত ইস্যুতে নতুন করে কূটনৈতিক আলোচনার সূচনা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের একতরফা নীতির ফলে বিশ্বব্যাপী কৌশলগত সম্পর্ক পুনর্গঠনের সূচনা হচ্ছে। চীন-রাশিয়া-ভারতের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ভবিষ্যতের ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।