০৯:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিহত শিশু সাজিদের জানাযা ও দাফন সম্পূর্ণ হাজারো মানুষের ঢল

( রাজশাহী প্রতিনিধি ) 

দুই বছরের অবুঝ ফুটফুটে  ছোট্ট শিশু নাম সাজিদ। গ্রাম: কোয়েল হাট পুর্ব পাড়া, ইউনিয়ন: পাঁচন্দর, থানা: তানোর, জেলা: রাজশাহী। মায়ের নাড়িছেঁড়া বুকের ধন  শিশু সাজিদ অকালেই চলে গেলেন। মা-বাবার খুব আদরের ছিল শিশু সাজিদ। দুই বছর বয়সেই সাজিদ মা-বাবার ও দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে দুনিয়া ছেড়ে মা-বাবা ও সবাইকে কাঁদিয়ে এবং পুরো বিশ্ব বাসীকে নতুন রুপে জানিয়ে নতুন ইতিহাস গড়ে চলে গেলেন, মারা গেলেন ছোট্ট শিশু সাজিদ। জানা যায় যে গত ১০ই ডিসেম্বর দুপুর ১২ টার দিকে শিশু সাজিদ তার আদরের  মায়ের সাথে বাড়ির পাশে মাঠে বেড়াতে যান। এই যাওয়া যে সাজিদের শেষ যাওয়া হবে তা ছোট্ট শিশু সাজিদ, তার মা এবং কারও  তো তা জানার কথা না। এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা কেউ তো কল্পনা করেন না। সাজিদ অকালে চলে যাওয়ার কারণ হলো-

সাজিদ মায়ের সাথে যাওয়ার রাস্তার সাথেই ছিল মটর পাম্পের মিনিমাম ৯০ ফিট গভীর গর্তের মরন ফাঁদ। এই ৯০ ফিট মটর পাম্প পুরোপুরি ছিল অনিরাপদ ফাঁকা। অবুঝ শিশু সাজিদ খড় পড়ে থাকা রাস্তা মনে করে পা দিলে মুহূর্তেই  সাজিদ গর্তের ভিতর পড়ে  যায়। সাজিদ গর্তে পড়ে মা-মা বলে ডাক দিলে পাশে থাকা মা দৌড়ে এসে বুঝতে পারেন নাড়িছেঁড়া বুকের ধন সাজিদ মুহুর্তেই গর্তের নিচে চলে গেছে। মায়ের আর্তনাদ শুনে এলাকা বাসী ও ফায়ার সার্ভিসের অদম্য সাহসী ও পরিশ্রমী চৌকশ টিম ছুটে আসেন এবং গত ১০ই ডিসেম্বর পুরো দিনরাত এবং ১১ই ডিসেম্বর পুরো দিন ও  রাত নয়টা পর্যন্ত একটানা মাটি কাটা মেশিন দিয়ে  কঠোর পরিশ্রম করে প্রায় ৫০ ফিট মাটি খুঁড়ে ১১ই ডিসেম্বর রাত নয়টার পরপরই সাজিদ কে গর্ত থেকে উদ্ধার করে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে ডাক্তার সাজিদ কে মৃত ঘোষণা করেন। উদ্ধার অভিযান দেখতে এবং সাজিদ কে কোলে ফিরে পেতে সাজিদের মা-বাবা এবং হাজার জনসাধারণ জড়ো হন। উদ্ধার অভিযান চালানোর সময় তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব নাঈমা খান, তানোর উপজেলার ভুমি কর্মকর্তা, তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ, তানোর থানা পুলিশ, জেলাা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের উদ্বর্তন কর্মকর্তা এবং ডিআইজি শাজাহান  উদ্ধার অভিযান পরিদর্শন করেন। সকল কর্মকর্তা  সাজিদের মা-বাবার পাশে থাকার আশ্বাস প্রদান করেন।সেই সাথে সকল কর্মকর্তা গণ মটর পাম্পের এমন বড় অনিয়ম যেন কোথাও আর না হয় এবং সেই সাথে মটর পাম্পের মালিক কছিরের ও সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস প্রদান করেন। সাজিদের মা-বাবা এবং জনসাধারণও এমন আশ্বাস দ্রুত বাস্তবায়ের জোর দাবি করেন।

 

আজ ১২ই ডিসেম্বর ২০২৫, রোজ শুক্রবার সকাল দশটা ত্রিশ মিনিটে নিহত সাজিদের  জানাযার নামাজ শেষে  দাফন সম্পূর্ণ হলো। সাজিদের জানাযায় হাজারো মানুষের উপস্থিতি ছিল। সকলেই সাজিদের জন্য কান্না হৃদয়ে মন থেকে দোয়া কামনা করেন। জানাযার নামাজ শেষে সাজিদের পিতা রাকিবুল ইসলাম বুক ভরা কষ্ট নিয়ে নিজের কাঁধে করে  ছেলে সাজিদের মৃত দেহ খাটলিতে করে বহন করে নিয়ে যান কবর স্হানে। নিহত সাজিদের পিতা নিজে কবরে নেমে মৃত ছেলে সাজিদ কে নিজ হাতে কবরে শুইয়ে দেন। বাবা রাকিবুল সহ উপস্থিত সকলে মৃত সাজিদের কবরে দুই হাত দিয়ে মাটি দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ করেন। মাটি দেওয়া সম্পূর্ণ হলে মৃত ছোট্ট সাজিদের জন্য বাবা সহ সকলেই দুই হাত তুলে মহান আল্লাহর নিকট দোয়া প্রার্থনা করেন। এই সময় বাবা রাকিবুল সহ উপস্থিত সকলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মৃত সাজিদ কে কবর দেওয়া ও দোয়া প্রার্থনা শেষে বাবা সহ নিজ আত্মীয় স্বজন ও জনসাধারণ সকলেই ভারাক্রান্ত মনে কবর স্হান ত্যাগ করেন।

জনপ্রিয় খবর

নাচোলে হেলাল ফাউন্ডেশনের বর্ষপূর্তি ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস-২০২৫ পালিত

নিহত শিশু সাজিদের জানাযা ও দাফন সম্পূর্ণ হাজারো মানুষের ঢল

সর্বশেষ আপডেট : ০৩:২২:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫

( রাজশাহী প্রতিনিধি ) 

দুই বছরের অবুঝ ফুটফুটে  ছোট্ট শিশু নাম সাজিদ। গ্রাম: কোয়েল হাট পুর্ব পাড়া, ইউনিয়ন: পাঁচন্দর, থানা: তানোর, জেলা: রাজশাহী। মায়ের নাড়িছেঁড়া বুকের ধন  শিশু সাজিদ অকালেই চলে গেলেন। মা-বাবার খুব আদরের ছিল শিশু সাজিদ। দুই বছর বয়সেই সাজিদ মা-বাবার ও দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে দুনিয়া ছেড়ে মা-বাবা ও সবাইকে কাঁদিয়ে এবং পুরো বিশ্ব বাসীকে নতুন রুপে জানিয়ে নতুন ইতিহাস গড়ে চলে গেলেন, মারা গেলেন ছোট্ট শিশু সাজিদ। জানা যায় যে গত ১০ই ডিসেম্বর দুপুর ১২ টার দিকে শিশু সাজিদ তার আদরের  মায়ের সাথে বাড়ির পাশে মাঠে বেড়াতে যান। এই যাওয়া যে সাজিদের শেষ যাওয়া হবে তা ছোট্ট শিশু সাজিদ, তার মা এবং কারও  তো তা জানার কথা না। এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা কেউ তো কল্পনা করেন না। সাজিদ অকালে চলে যাওয়ার কারণ হলো-

সাজিদ মায়ের সাথে যাওয়ার রাস্তার সাথেই ছিল মটর পাম্পের মিনিমাম ৯০ ফিট গভীর গর্তের মরন ফাঁদ। এই ৯০ ফিট মটর পাম্প পুরোপুরি ছিল অনিরাপদ ফাঁকা। অবুঝ শিশু সাজিদ খড় পড়ে থাকা রাস্তা মনে করে পা দিলে মুহূর্তেই  সাজিদ গর্তের ভিতর পড়ে  যায়। সাজিদ গর্তে পড়ে মা-মা বলে ডাক দিলে পাশে থাকা মা দৌড়ে এসে বুঝতে পারেন নাড়িছেঁড়া বুকের ধন সাজিদ মুহুর্তেই গর্তের নিচে চলে গেছে। মায়ের আর্তনাদ শুনে এলাকা বাসী ও ফায়ার সার্ভিসের অদম্য সাহসী ও পরিশ্রমী চৌকশ টিম ছুটে আসেন এবং গত ১০ই ডিসেম্বর পুরো দিনরাত এবং ১১ই ডিসেম্বর পুরো দিন ও  রাত নয়টা পর্যন্ত একটানা মাটি কাটা মেশিন দিয়ে  কঠোর পরিশ্রম করে প্রায় ৫০ ফিট মাটি খুঁড়ে ১১ই ডিসেম্বর রাত নয়টার পরপরই সাজিদ কে গর্ত থেকে উদ্ধার করে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে ডাক্তার সাজিদ কে মৃত ঘোষণা করেন। উদ্ধার অভিযান দেখতে এবং সাজিদ কে কোলে ফিরে পেতে সাজিদের মা-বাবা এবং হাজার জনসাধারণ জড়ো হন। উদ্ধার অভিযান চালানোর সময় তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব নাঈমা খান, তানোর উপজেলার ভুমি কর্মকর্তা, তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ, তানোর থানা পুলিশ, জেলাা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের উদ্বর্তন কর্মকর্তা এবং ডিআইজি শাজাহান  উদ্ধার অভিযান পরিদর্শন করেন। সকল কর্মকর্তা  সাজিদের মা-বাবার পাশে থাকার আশ্বাস প্রদান করেন।সেই সাথে সকল কর্মকর্তা গণ মটর পাম্পের এমন বড় অনিয়ম যেন কোথাও আর না হয় এবং সেই সাথে মটর পাম্পের মালিক কছিরের ও সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস প্রদান করেন। সাজিদের মা-বাবা এবং জনসাধারণও এমন আশ্বাস দ্রুত বাস্তবায়ের জোর দাবি করেন।

 

আজ ১২ই ডিসেম্বর ২০২৫, রোজ শুক্রবার সকাল দশটা ত্রিশ মিনিটে নিহত সাজিদের  জানাযার নামাজ শেষে  দাফন সম্পূর্ণ হলো। সাজিদের জানাযায় হাজারো মানুষের উপস্থিতি ছিল। সকলেই সাজিদের জন্য কান্না হৃদয়ে মন থেকে দোয়া কামনা করেন। জানাযার নামাজ শেষে সাজিদের পিতা রাকিবুল ইসলাম বুক ভরা কষ্ট নিয়ে নিজের কাঁধে করে  ছেলে সাজিদের মৃত দেহ খাটলিতে করে বহন করে নিয়ে যান কবর স্হানে। নিহত সাজিদের পিতা নিজে কবরে নেমে মৃত ছেলে সাজিদ কে নিজ হাতে কবরে শুইয়ে দেন। বাবা রাকিবুল সহ উপস্থিত সকলে মৃত সাজিদের কবরে দুই হাত দিয়ে মাটি দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ করেন। মাটি দেওয়া সম্পূর্ণ হলে মৃত ছোট্ট সাজিদের জন্য বাবা সহ সকলেই দুই হাত তুলে মহান আল্লাহর নিকট দোয়া প্রার্থনা করেন। এই সময় বাবা রাকিবুল সহ উপস্থিত সকলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মৃত সাজিদ কে কবর দেওয়া ও দোয়া প্রার্থনা শেষে বাবা সহ নিজ আত্মীয় স্বজন ও জনসাধারণ সকলেই ভারাক্রান্ত মনে কবর স্হান ত্যাগ করেন।