০৪:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুনামগঞ্জ-২ আসনে ত্রি-মুখী নাকি দ্বিমুখী লড়া হবে ভোটারদের মাঝে রয়েছে কৌতুহল

কুলেন্দু শেখর দাস সুনামগঞ্জ (প্রতিনিধি ) 

ভাটির জনপদ হিসেবে খ্যাত সুনামগঞ্জ-২(দিরাই-শাল্লা) আসনে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় রাজনৈতিক উত্তাপ এখন তুঙ্গে। এ নিয়ে ও রয়েছে সাধারন ভোটারদের মাঝে উৎসবের আমেজের পাশাপাশি উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠ।

স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘদিন সুনামগঞ্জ-২ এ আওয়ামী লীগের প্রয়াত বর্ষীয়ান নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ‘দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত এই আসনে এবার ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সাংগঠনিক শক্তির বিচারে বিএনপি প্রার্থী নাছির উদ্দিন চৌধুরী এগিয়ে থাকলেও আলোচনায় উঠে এসেছেন জামায়াতে ইসলামীর তরুণ প্রার্থী অ্যাডভোকেট শিশির মনির। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরাসরি মাঠে না থাকলেও এক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন সমীকরণ।

এই আসনে মূল লড়াই জমে উঠেছে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরী এবং জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির-এর মধ্যে। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং স্থানীয় নেতৃত্বের ওপর শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ নাছির উদ্দিন চৌধুরীকে সুবিধাজনক অবস্থানে রেখেছে। ১৯৯৬ সালে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করে তিনি এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ধারা বদলে দিয়েছিলেন। বিএনপির স্থায়ী ভোটব্যাংকের পাশাপাশি সুরঞ্জিতপন্থী প্রগতিশীল ভোটারদের একটি অংশ তার দিকে ঝুঁকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছেন শিশির মনির। ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও গ্রহণযোগ্যতার কারণে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তিনি বেশ জনপ্রিয়। তবে তার প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো দলীয় সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং কেন্দ্রভিত্তিক কর্মীর অভাব।

আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে নির্বাচনে না থাকলেও স্থানীয় রাজনীতির মাঠ ছেড়ে দেয়নি। গুঞ্জন রয়েছে, আওয়ামী ঘরানার একটি বড় অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ঋতেশ দেব ঝিনুককে সমর্থন দিতে পারে। তিনি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে শক্ত অবস্থানে থাকেন, তবে ভোট ভাগাভাগির অঙ্ক পাল্টে যেতে পারে। এতে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হলে জামায়াতের অবস্থান কিছুটা দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় বিশ্লেষকরা।

এই আসনে প্রায় ৩ লাখ ভোটার রয়েছেন, যার মধ্যে একটি বড় অংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সময় থেকেই এই ভোটব্যাংক জয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখে আসছে। এবার নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও আস্থার প্রশ্নে তারা কাকে বেছে নেবেন, সেটিই হবে দেখার বিষয়। এছাড়া নারী ভোটারদের উপস্থিতি ও পছন্দের প্রার্থীও জয়-পরাজয়ের ব্যবধান গড়ে দিতে পারে।

নির্বাচনী মাঠে আরও রয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মনোনীত মাওলানা শুয়াইব আহমদ এবং খেলাফত মজলিস মনোনীত প্রার্থী মাওলানা নুরুদ্দিন। তবে মূল দুই প্রার্থীর ভোট সমীকরণে তারা কতটা ভাগ বসাতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী নির্বাচনী কার্যক্রমের সময়সূচি মনোনয়ন জমার শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর, যাচাই-বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ২০ জানুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি, প্রচারণা শুরু ২২ জানুয়ারি, ভোটগ্রহণ: ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭:৩০ থেকে বিকেল ৪:৩০ পর্যন্ত।

সব মিলিয়ে দিরাই-শাল্লার হাওর পাড়ের মানুষের নজর এখন ১২ ফেব্রুয়ারির দিকে। প্রবীণ বনাম নবীনের এই লড়াইয়ে শেষ হাসি কে হাসবেন, তা নির্ভর করছে সাধারণ ভোটারদের সিদ্ধান্তের ওপর।

জনপ্রিয় খবর

নাচোলে কৃষকদের মাঝে প্রনোদনার সার-বীজ ও উপকরণ বিতরণ

সুনামগঞ্জ-২ আসনে ত্রি-মুখী নাকি দ্বিমুখী লড়া হবে ভোটারদের মাঝে রয়েছে কৌতুহল

সর্বশেষ আপডেট : ১১:৫৪:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

কুলেন্দু শেখর দাস সুনামগঞ্জ (প্রতিনিধি ) 

ভাটির জনপদ হিসেবে খ্যাত সুনামগঞ্জ-২(দিরাই-শাল্লা) আসনে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় রাজনৈতিক উত্তাপ এখন তুঙ্গে। এ নিয়ে ও রয়েছে সাধারন ভোটারদের মাঝে উৎসবের আমেজের পাশাপাশি উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠ।

স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘদিন সুনামগঞ্জ-২ এ আওয়ামী লীগের প্রয়াত বর্ষীয়ান নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ‘দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত এই আসনে এবার ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সাংগঠনিক শক্তির বিচারে বিএনপি প্রার্থী নাছির উদ্দিন চৌধুরী এগিয়ে থাকলেও আলোচনায় উঠে এসেছেন জামায়াতে ইসলামীর তরুণ প্রার্থী অ্যাডভোকেট শিশির মনির। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরাসরি মাঠে না থাকলেও এক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন সমীকরণ।

এই আসনে মূল লড়াই জমে উঠেছে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরী এবং জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির-এর মধ্যে। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং স্থানীয় নেতৃত্বের ওপর শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ নাছির উদ্দিন চৌধুরীকে সুবিধাজনক অবস্থানে রেখেছে। ১৯৯৬ সালে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করে তিনি এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ধারা বদলে দিয়েছিলেন। বিএনপির স্থায়ী ভোটব্যাংকের পাশাপাশি সুরঞ্জিতপন্থী প্রগতিশীল ভোটারদের একটি অংশ তার দিকে ঝুঁকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছেন শিশির মনির। ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও গ্রহণযোগ্যতার কারণে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তিনি বেশ জনপ্রিয়। তবে তার প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো দলীয় সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং কেন্দ্রভিত্তিক কর্মীর অভাব।

আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে নির্বাচনে না থাকলেও স্থানীয় রাজনীতির মাঠ ছেড়ে দেয়নি। গুঞ্জন রয়েছে, আওয়ামী ঘরানার একটি বড় অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ঋতেশ দেব ঝিনুককে সমর্থন দিতে পারে। তিনি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে শক্ত অবস্থানে থাকেন, তবে ভোট ভাগাভাগির অঙ্ক পাল্টে যেতে পারে। এতে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হলে জামায়াতের অবস্থান কিছুটা দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় বিশ্লেষকরা।

এই আসনে প্রায় ৩ লাখ ভোটার রয়েছেন, যার মধ্যে একটি বড় অংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সময় থেকেই এই ভোটব্যাংক জয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখে আসছে। এবার নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও আস্থার প্রশ্নে তারা কাকে বেছে নেবেন, সেটিই হবে দেখার বিষয়। এছাড়া নারী ভোটারদের উপস্থিতি ও পছন্দের প্রার্থীও জয়-পরাজয়ের ব্যবধান গড়ে দিতে পারে।

নির্বাচনী মাঠে আরও রয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মনোনীত মাওলানা শুয়াইব আহমদ এবং খেলাফত মজলিস মনোনীত প্রার্থী মাওলানা নুরুদ্দিন। তবে মূল দুই প্রার্থীর ভোট সমীকরণে তারা কতটা ভাগ বসাতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী নির্বাচনী কার্যক্রমের সময়সূচি মনোনয়ন জমার শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর, যাচাই-বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ২০ জানুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি, প্রচারণা শুরু ২২ জানুয়ারি, ভোটগ্রহণ: ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭:৩০ থেকে বিকেল ৪:৩০ পর্যন্ত।

সব মিলিয়ে দিরাই-শাল্লার হাওর পাড়ের মানুষের নজর এখন ১২ ফেব্রুয়ারির দিকে। প্রবীণ বনাম নবীনের এই লড়াইয়ে শেষ হাসি কে হাসবেন, তা নির্ভর করছে সাধারণ ভোটারদের সিদ্ধান্তের ওপর।