১২:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৬, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভিক্ষুক পেশা থেকে এমপি প্রার্থী ত্রিশালে আবুল মনসুরকে ঘিরে চাঞ্চল্য, কৌতূহল ও বিতর্ক

স্টাফ রিপোর্টার :

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় সৃষ্টি হয়েছে এক অভূতপূর্ব আলোচনা ও চাঞ্চল্য। কারণ, এই নির্বাচনী মাঠে প্রার্থী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন এক ব্যতিক্রমধর্মী ব্যক্তি। বালিপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবুল মনসুর ফকির, যিনি স্থানীয়ভাবে একজন ভিক্ষুক হিসেবে পরিচিত।
ভিক্ষাবৃত্তির মতো প্রান্তিক পেশা থেকে সরাসরি জাতীয় সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন—এমন ঘটনা ত্রিশালের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা। তার প্রার্থী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, চায়ের দোকান, বাজার ও গ্রাম্য আড্ডায় শুরু হয়েছে নানা আলোচনা, কৌতূহল ও বিতর্ক।
‘অবহেলিত মানুষের প্রতিনিধি’ হতে চান আবুল মনসুর
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আবুল মনসুর ফকির দীর্ঘদিন ধরেই জীবিকার তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত। কঠিন জীবনসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বড় হওয়া এই মানুষটি দাবি করছেন, সমাজের গরিব, অসহায়, দিনমজুর, ভিক্ষুক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের বাস্তব কষ্ট তিনি নিজের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছেন। সেই অভিজ্ঞতাই তাকে রাজনীতিতে আসতে অনুপ্রাণিত করেছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিক মারুফের এক প্রশ্নের জবাবে আবুল মনসুর ফকির বলেন,
“আমি কোনো বড় নেতা না, বড় বাড়িতে জন্মাইনি। আমি রাস্তায় থেকেছি, না খেয়ে থেকেছি। গরিব মানুষের কষ্ট আমি বই পড়ে শিখিনি—নিজের জীবন দিয়ে দেখেছি। বড় বড় নেতারা আমাদের কথা বলে, কিন্তু আমাদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আনে না। তাই আমি নিজেই দাঁড়িয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, সংসদে যাওয়ার সুযোগ পেলে তিনি ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন, গরিবদের চিকিৎসা ও শিক্ষার সুযোগ, এবং সামাজিক বৈষম্য কমানোর বিষয়ে কাজ করতে চান।
এলাকাবাসীর মিশ্র প্রতিক্রিয়া
আবুল মনসুরের প্রার্থী হওয়া নিয়ে ত্রিশালের মানুষের মধ্যে দেখা গেছে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া। কেউ এটিকে সাহসী ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ বিষয়টিকে নির্বাচনী কৌতুক বা প্রচারের কৌশল হিসেবেও বিবেচনা করছেন।
ত্রিশালের প্রবীণ বাসিন্দা সেলিম মিয়া ও আারাফাত বলেন,
“এর আগে কখনো এমন ঘটনা দেখিনি। ভিক্ষুক থেকে এমপি প্রার্থী এটা যেমন অবাক করার, তেমনি আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে। রাজনীতি কি শুধু ধনী আর ক্ষমতাবানদের জন্যই?”
অন্যদিকে, একদল তরুণ মনে করছেন, এই ঘটনা দেশের রাজনীতিতে শ্রেণিভিত্তিক বাস্তবতার একটি নগ্ন চিত্র তুলে ধরেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আবুল মনসুরের প্রার্থী হওয়া শুধু একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়; বরং এটি সমাজে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা বৈষম্য, হতাশা ও প্রতিনিধিত্ব সংকটের প্রতিফলন।
একজন বিশ্লেষক বলেন,
“তিনি জিতবেন কি না, সেটি বড় বিষয় নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো এই প্রার্থিতা দেখিয়ে দিচ্ছে যে সাধারণ মানুষ এখন প্রচলিত রাজনীতির ওপর আস্থা হারাচ্ছে এবং নিজেরাই বিকল্প পথ খুঁজছে।”
আইনগত কোনো বাধা নেই
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এমপি প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে পেশা কোনো বাধা নয়। সংবিধান ও নির্বাচন আইন অনুযায়ী নির্ধারিত যোগ্যতা পূরণ করলে যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। সে হিসেবে আবুল মনসুর ফকিরের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি বর্তমানে যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
শেষ পর্যন্ত কী হবে?
ভিক্ষুক পেশা থেকে সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন এই ব্যতিক্রমী গল্প শেষ পর্যন্ত কোন দিকে মোড় নেয়, তা জানতে এখন অপেক্ষায় ত্রিশালবাসীসহ গোটা এলাকার মানুষ। জয়ের সম্ভাবনা যাই হোক না কেন, আবুল মনসুর ফকির ইতোমধ্যেই স্থানীয় ও জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন আর সেটাই হয়তো তার সবচেয়ে বড় ‘রাজনৈতিক জয়।।

জনপ্রিয় খবর

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের বদলপুর এলাকায় গাছের সাথে ধাক্কা লেগে সিএনজির চালকসহ ৫ জন আহত

ভিক্ষুক পেশা থেকে এমপি প্রার্থী ত্রিশালে আবুল মনসুরকে ঘিরে চাঞ্চল্য, কৌতূহল ও বিতর্ক

সর্বশেষ আপডেট : ০৩:৩৬:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টার :

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় সৃষ্টি হয়েছে এক অভূতপূর্ব আলোচনা ও চাঞ্চল্য। কারণ, এই নির্বাচনী মাঠে প্রার্থী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন এক ব্যতিক্রমধর্মী ব্যক্তি। বালিপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবুল মনসুর ফকির, যিনি স্থানীয়ভাবে একজন ভিক্ষুক হিসেবে পরিচিত।
ভিক্ষাবৃত্তির মতো প্রান্তিক পেশা থেকে সরাসরি জাতীয় সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন—এমন ঘটনা ত্রিশালের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা। তার প্রার্থী হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, চায়ের দোকান, বাজার ও গ্রাম্য আড্ডায় শুরু হয়েছে নানা আলোচনা, কৌতূহল ও বিতর্ক।
‘অবহেলিত মানুষের প্রতিনিধি’ হতে চান আবুল মনসুর
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আবুল মনসুর ফকির দীর্ঘদিন ধরেই জীবিকার তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত। কঠিন জীবনসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বড় হওয়া এই মানুষটি দাবি করছেন, সমাজের গরিব, অসহায়, দিনমজুর, ভিক্ষুক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের বাস্তব কষ্ট তিনি নিজের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছেন। সেই অভিজ্ঞতাই তাকে রাজনীতিতে আসতে অনুপ্রাণিত করেছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিক মারুফের এক প্রশ্নের জবাবে আবুল মনসুর ফকির বলেন,
“আমি কোনো বড় নেতা না, বড় বাড়িতে জন্মাইনি। আমি রাস্তায় থেকেছি, না খেয়ে থেকেছি। গরিব মানুষের কষ্ট আমি বই পড়ে শিখিনি—নিজের জীবন দিয়ে দেখেছি। বড় বড় নেতারা আমাদের কথা বলে, কিন্তু আমাদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আনে না। তাই আমি নিজেই দাঁড়িয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, সংসদে যাওয়ার সুযোগ পেলে তিনি ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন, গরিবদের চিকিৎসা ও শিক্ষার সুযোগ, এবং সামাজিক বৈষম্য কমানোর বিষয়ে কাজ করতে চান।
এলাকাবাসীর মিশ্র প্রতিক্রিয়া
আবুল মনসুরের প্রার্থী হওয়া নিয়ে ত্রিশালের মানুষের মধ্যে দেখা গেছে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া। কেউ এটিকে সাহসী ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ বিষয়টিকে নির্বাচনী কৌতুক বা প্রচারের কৌশল হিসেবেও বিবেচনা করছেন।
ত্রিশালের প্রবীণ বাসিন্দা সেলিম মিয়া ও আারাফাত বলেন,
“এর আগে কখনো এমন ঘটনা দেখিনি। ভিক্ষুক থেকে এমপি প্রার্থী এটা যেমন অবাক করার, তেমনি আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে। রাজনীতি কি শুধু ধনী আর ক্ষমতাবানদের জন্যই?”
অন্যদিকে, একদল তরুণ মনে করছেন, এই ঘটনা দেশের রাজনীতিতে শ্রেণিভিত্তিক বাস্তবতার একটি নগ্ন চিত্র তুলে ধরেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আবুল মনসুরের প্রার্থী হওয়া শুধু একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়; বরং এটি সমাজে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা বৈষম্য, হতাশা ও প্রতিনিধিত্ব সংকটের প্রতিফলন।
একজন বিশ্লেষক বলেন,
“তিনি জিতবেন কি না, সেটি বড় বিষয় নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো এই প্রার্থিতা দেখিয়ে দিচ্ছে যে সাধারণ মানুষ এখন প্রচলিত রাজনীতির ওপর আস্থা হারাচ্ছে এবং নিজেরাই বিকল্প পথ খুঁজছে।”
আইনগত কোনো বাধা নেই
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এমপি প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে পেশা কোনো বাধা নয়। সংবিধান ও নির্বাচন আইন অনুযায়ী নির্ধারিত যোগ্যতা পূরণ করলে যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। সে হিসেবে আবুল মনসুর ফকিরের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি বর্তমানে যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
শেষ পর্যন্ত কী হবে?
ভিক্ষুক পেশা থেকে সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন এই ব্যতিক্রমী গল্প শেষ পর্যন্ত কোন দিকে মোড় নেয়, তা জানতে এখন অপেক্ষায় ত্রিশালবাসীসহ গোটা এলাকার মানুষ। জয়ের সম্ভাবনা যাই হোক না কেন, আবুল মনসুর ফকির ইতোমধ্যেই স্থানীয় ও জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন আর সেটাই হয়তো তার সবচেয়ে বড় ‘রাজনৈতিক জয়।।