০২:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ময়মনসিংহে নিহত পোশাক শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসের শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসক

মারুফ হোসেন :

ময়মনসিংহের ভালুকায় নির্মমভাবে নিহত পোশাক কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে তিনি তারাকান্দা উপজেলার বানিহালা ইউনিয়নের মোকামিয়াকান্দা গ্রামে নিহত দীপু চন্দ্র দাসের বাড়িতে যান।
এ সময় জেলা প্রশাসক নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানান। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা, খাদ্য সামগ্রী, একটি সেলাই মেশিন ও শীতবস্ত্র প্রদান করা হয়।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ
এদিকে, নিহত দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যা ও আগুনে পোড়ানোর ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহ নগরের ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হিন্দু মহাজোট ও সচেতন সনাতনী সমাজ।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ হিন্দু মহাজোটের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নিপেশ চন্দ্র সরকার। বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ জেলা হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক ডা. এন সি পাল, নিহত দীপু চন্দ্র দাসের প্রতিবেশী লিমন দেবনাথসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা দীপু চন্দ্র দাসকে নির্মম ও বর্বরোচিত কায়দায় হত্যার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। তারা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতিই বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে সংখ্যালঘু শূন্য করে দিচ্ছে। বক্তারা আরও বলেন, “আমরা সহিংসতা নয়, সহাবস্থান চাই। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ চাই।”
বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, দীপু চন্দ্র দাস ছিলেন দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার অবুঝ শিশু সন্তান, স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের দেখাশোনার আর কেউ নেই। তার মৃত্যুর পর পরিবারে চলছে শোক আর আহাজারি।
ঘটনার বিবরণ
নিহত দীপু চন্দ্র দাস ময়মনসিংহের ভালুকা থানাধীন ডুবুলিয়া পাইওনিয়র নিট ফ্যাক্টরীর শ্রমিক ছিলেন। তিনি তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়াকান্দা গ্রামের রবিলাল চন্দ্র দাসের ছেলে।
অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১৮ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ৯টার দিকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলে দীপু চন্দ্র দাসকে কারখানা থেকে জোরপূর্বক বের করে আনা হয়। এরপর দাঙ্গা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশীয় অস্ত্র ও কিল-ঘুষি দিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে তার মরদেহ জামিরদিয়া স্কয়ার মাস্টারবাড়ি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাঝখানের আইল্যান্ডে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই ১৯ ডিসেম্বর ভালুকা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন (মামলা নং–২৬)। ঘটনার পরপরই প্রশাসন তৎপর হয়। ইতোমধ্যে পুলিশ ও র‍্যাব-১৪, ময়মনসিংহ যৌথ অভিযানে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে সব ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জনপ্রিয় খবর

তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ময়মনসিংহ বিভাগীয় যুবদলের গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

ময়মনসিংহে নিহত পোশাক শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসের শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসক

সর্বশেষ আপডেট : ০১:৫১:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

মারুফ হোসেন :

ময়মনসিংহের ভালুকায় নির্মমভাবে নিহত পোশাক কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে তিনি তারাকান্দা উপজেলার বানিহালা ইউনিয়নের মোকামিয়াকান্দা গ্রামে নিহত দীপু চন্দ্র দাসের বাড়িতে যান।
এ সময় জেলা প্রশাসক নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানান। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা, খাদ্য সামগ্রী, একটি সেলাই মেশিন ও শীতবস্ত্র প্রদান করা হয়।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ
এদিকে, নিহত দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যা ও আগুনে পোড়ানোর ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহ নগরের ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হিন্দু মহাজোট ও সচেতন সনাতনী সমাজ।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ হিন্দু মহাজোটের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নিপেশ চন্দ্র সরকার। বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ জেলা হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক ডা. এন সি পাল, নিহত দীপু চন্দ্র দাসের প্রতিবেশী লিমন দেবনাথসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা দীপু চন্দ্র দাসকে নির্মম ও বর্বরোচিত কায়দায় হত্যার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। তারা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতিই বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে সংখ্যালঘু শূন্য করে দিচ্ছে। বক্তারা আরও বলেন, “আমরা সহিংসতা নয়, সহাবস্থান চাই। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ চাই।”
বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, দীপু চন্দ্র দাস ছিলেন দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার অবুঝ শিশু সন্তান, স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের দেখাশোনার আর কেউ নেই। তার মৃত্যুর পর পরিবারে চলছে শোক আর আহাজারি।
ঘটনার বিবরণ
নিহত দীপু চন্দ্র দাস ময়মনসিংহের ভালুকা থানাধীন ডুবুলিয়া পাইওনিয়র নিট ফ্যাক্টরীর শ্রমিক ছিলেন। তিনি তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়াকান্দা গ্রামের রবিলাল চন্দ্র দাসের ছেলে।
অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১৮ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ৯টার দিকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলে দীপু চন্দ্র দাসকে কারখানা থেকে জোরপূর্বক বের করে আনা হয়। এরপর দাঙ্গা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশীয় অস্ত্র ও কিল-ঘুষি দিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে তার মরদেহ জামিরদিয়া স্কয়ার মাস্টারবাড়ি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাঝখানের আইল্যান্ডে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই ১৯ ডিসেম্বর ভালুকা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন (মামলা নং–২৬)। ঘটনার পরপরই প্রশাসন তৎপর হয়। ইতোমধ্যে পুলিশ ও র‍্যাব-১৪, ময়মনসিংহ যৌথ অভিযানে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে সব ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।